মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে এই পুজো করা হয়ে থাকে। যে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বাড়িতে বাড়িতে এই পূজা করা হয়। বাড়িতে ছোটদের হাতে খড়ি দেওয়ার জন্য অনেকে পূজা করে থাকেন। জ্ঞান বাণী এবং শিল্পের দেবী হলেন সরস্বতী। রীতি মেনে পূজার পরের দিন ষষ্ঠী পুজো করা হয়ে থাকে। তিথি অনুসারে শনিবার সরস্বতী পুজো। এই একটা দিন পড়া থেকে ছুটি মেলে সকল ছাত্রছাত্রীদের। সরস্বতী পুজো উৎসব চলে দুদিন ধরে। পুজোর পরের দিন সব বাঙালি বাড়িতে গোটা সেদ্ধ খাওয়ার রীতি চালু আছে। সরস্বতী পুজোর পরের দিন পালিত হয় শীতলা ষষ্ঠী।
বাড়ির মেয়েরা পালন করে এই ব্রত। এই দিন বাড়িতে রান্না বন্ধ রাখার রীতি আছে। সরস্বতী পুজোর পরের দিন বাড়িতে রান্না বন্ধ থাকে। সঙ্গে শীল পাতার নিয়ম নেই। এই দিন সব বাড়িতে গোটা সেদ্ধ খাওয়া হয়।
বসন্ত পঞ্চমীর পরের দিন পালিত হয় শীতল ষষ্ঠী। বাড়ির শীল ও নোড়াকে এদিন পুজো করা হয়। সংসারের মঙ্গল কামনায় এই ব্রত পালন করা হয়। ব্রত ভঙ্গ ভাঙা হয় গোটা সেদ্ধ খেয়ে। সরস্বতী পুজোর দিন প্রতি বছরই সবজির বাজারে থাকে চড়া দাম। শীম, বেগুন, মুলোর মতো সবজি বিক্রি হয় চড়া দামে।
এদিন গোটা সেদ্ধ তারির জন্য কেনা হয় একাধিক সবজি। সরস্বতী পুজোর দিন শিষ পালং, গোটা মুগ, গোটা বেগুন, গোটা শিম, গোটা কড়াইশুটি, টোপা কুল, সজনে ফুল কিনে আনা হয়। এই সব উপকরণ দিয়ে তৈরি হয় গোটা সেদ্ধ।
গোটা সেদ্ধ তৈরিতে দরকার ৬টি করে আলু, রাঙা আলু, বেগুন, শিষ পালং শাক, সিম, মটরশুঁটি। দরকার সবুজ মুগ কড়াই, সরষের তেল, আদা বাটা, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, নুন, চিনি, জিরে, পাঁচ ফোড়ন ও শুকনো লঙ্কা। সরস্বতী পুজোর দিন বিকেলে সকল রমণীরা রান্না ঘর পরিষ্কার করেন। এবার নতুন কড়াইয়ে গোটা সেদ্ধ বানান।
প্রথমে কড়াই সরষের তেল দিতে হয়। এতে পাঁচফোড়ন ও শুকনো লঙ্কা দিতে হয়। এবার সব সবজি না কেটে দেওয়ার নিয়ম আছে। একটু নেড়ে নুন হলুদ দিয়ে, পরিমাণ মতো জল দিয়ে কড়াই ঢাকা দিয়ে দিতে হবে। গোটা সেদ্ধ তৈরির সময় কোনও সবজি কাটা যাবে না। আলুর খোসাও ছাড়ানো হয় না। গোটা অবস্থাতেই তা কড়াইয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। তা সেদ্ধ হয়ে রান্না হয়ে যায়।
সরস্বতী পুজোর সময় শীত বিদায় নিয়ে বসন্ত আসে। এই সময় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। মনে করা হয়, এই গোটা সেদ্ধ জীবাণু সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। শরীর ঠান্ডা থাকে গোটা সেদ্ধ খেলে।
কর্মব্যস্ত অনেক বাঙালি হয়তো আজ গোটা সেদ্ধ খাওয়ার রীতি ভুলে গিয়েছেন। তবে, একটা সময় এই গোটা সেদ্ধ প্রতিটি হেঁশেলে তৈরি হত। একে অন্যের বাড়িতে এই খাবার দেওয়ারও চল ছিল।এখনো অনেকের বাড়িতে এই রীতি প্রচলন আছে।